বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার তিন ভাগের এক ভাগ এখন তরুণ। এই তরুন এবং যুবাদের যদি সঠিকভাবে কাজে লাগানো যায় তবে দেশের উন্নতি অনিবার্য। তরুণরা তাঁদের উদ্দীপনা এবং নতু ন কিছু করবার আগ্রহ নিয়েই আনতে বৈধ পারে পরিবর্তন। তারা পূর্বের ভুলগুলো ভেঙ্গে উন্মোচন করতে পারে শুদ্ধ জীবনের দ্বার। তারা চাইলে গড়ে তুলতে পারে সচেতনতা, তারা চাইলেই পারে সমাজের এবং মানুষের মনের জঞ্জাল দূর করতে। আজ যারা তরুণ কাল তারা আসীন হবে দেশের গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে। তারা তৈরি করবে নতুন নীতি এবং বদলে দিবে ভুল ধারণা গুলোকে। কিন্তু এর জন্যে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো তরুণদের সঠিক পথে চালনা করা।
নিরাপদ গর্ভপাত এবং তরুণদের ধারণাঃ একবার আমার এক গবেষণার কাজে আমার সুযোগ হয়েছিলো তরুণদের সাথে গর্ভপাত বিষয়ে কথা বলবার। এবং এটি সত্যি যে আমি আশাহত হয়েছি। এই বিষয়ে মেয়ে এবং ছেলেদের চিন্তাধারার মাঝে বিস্তর ফারাক খুজে পেয়েছি। বেশির ভাগের মাঝেই নেই এই বিষয়ে পর্যাপ্ত ধারণা এবং অনেকেই গর্ভপাত বিষয়টিকে বেআইনি হিসেবে রাখতেই চায়। যদিও মেয়েদের ভেতরে দেখেছি সহানুভূতিশীল ভাবনা। মেয়েরা তাঁদের নিজেদেরকে সেই অবস্থানে বসিয়ে ভেবেছে এবং তাঁদের মাঝে এক অজানা আতংক ছিলো। অনেক ছেলেমেয়ে বলেছে যে তারা এমন অনেককেই চেনে যাদের এই পরিস্থিতির মাঝে দিয়ে যেতে হয়েছে কিন্তু তাঁদের খুব ভাল ধারণা নেই যে এই বিষয়ে আইন বা চিকিৎসাশাস্ত্র কি বলে।
কিন্তু যখন তাঁদেরকে বাস্তব কিছু উদাহরণ দেয়া হলো যে কেনো গর্ভপাত বিষয়টি অপরাধ হওয়া উচিত না তখন তাঁদের মাঝে জেগে উঠেছে অনেক চিন্তার খোরাক। তখন তারা ভেবে দেখেছে কেন কেউ গর্ভপাতের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়। হয়তো সাথে সাথে তাঁদের মতামত পরিবর্তন হয়নি কিন্তু তাঁদের চিন্তার দ্বার খুলে গিয়েছে। তারা হয়তো পরবর্তীতে এ বিষয়ে ভাববে এবং অন্যদের সাথে এই বিষয়ে কথা বলবে। তাঁদের জানার আগ্রহ আছে কিন্তু তাঁদের সঠিক তথ্য জানার মাধ্যম নেই। কিন্তু আগ্রহ তৈরি হলে তারা মাধ্যম খুজে বের করার চেষ্টা করবে।
কেন তরুণরাই পারবেঃ নতুন চিন্তা, পরিবর্তনের চিন্তা থাকতে পারে সবার মাঝে। তবে তরুণদের কাছে সুযোগ থাকে চিন্তার সাথে সাথে কিছু করবার। দলীয় কাজে সবসময় এগিয়ে থাকে তরুণরা। তরুণদের হাতে সময় আছে ধীরে ধীরে পরিবর্তন আনার। তাঁদের কাছে সুযোগ আছে পৃথিবীটাকে নতুন করে দেখার। তারা পারে নতুন উদ্দমে নতুন কিছু শুরু করতে। সবচাইতে গুরত্বপূর্ণ বিষয় হলো তারা দেশের ভবিষ্যৎ। ভবিষ্যতের নীতি নির্ধারক হবে আজকের যুবারা। তাই সকল বিষয়ে তাঁদের জ্ঞান থাকাটা খুবই গুরত্বপূর্ণ। এছাড়া এই প্রজন্ম পরবর্তীতে আরেক প্রজন্মকে শেখাবে। তাই এই প্রজন্মকে সঠিক বিষয় জানানো খুবই জরুরী।
আরেকটি বিষয় হলো তরুণদের নেটওয়ার্কিং শক্তি। তরুণরা এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং ইন্টারনেট ব্যাবহারের মাধ্যমে একটি শক্তিশালী দল গঠন করতে পারে। শুধু দেশে নয়, অন্য দেশের নানা কার্যক্রমে তারা যুক্ত হতে পারে। তারা পারে তাঁদের চিন্তাগুলো অনেক মানুষ দের মাঝে ছড়িয়ে দিতে।
তরুণদের সাহায্য করতে আমরা যা করতে পারিঃ তরুণরা হয়তো একদিন গর্ভপাতকে নিরাপদ ও বৈধ করবে কিন্তু এর জন্যে তাঁদের এখন এই বিষয়ে জানতে হবে। এই জানানোর দায়িত্ব আপনার, আমার এবং এই সমাজের। তরুণরা বাইরের দুনিয়া সম্পর্কে যখন জানতে শিখবে তখন তাঁদের সঠিক ধারণা দেয়া খুব দরকার। তারা যেন নিজেদের চিন্তা এবং বিবেচনা দিয়ে ভাবতে শেখে এই বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। তাঁদের অন্যের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া শেখাতে হবে। মানবাধিকার বিষয়ে যেন তারা সঠিক শিক্ষা পায় সেই বিষয় নিশ্চিত করতে হবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর। নারীদের অধিকার বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠনগুলোর উচিত তরুণদের সাথে আরো বেশি কাজ করা। তাঁদের মাঝে সমাজসেবা বিষয়ক কাজ সম্পর্কে উৎসাহ প্রদান করা। তরুণরা যদি নিরাপদ ও বৈধ গর্ভপাত বিষয়ে কাজ করতে চায় তবে তাঁদের কাজের ক্ষেত্র তৈরিতে সাহায্য করতে হবে।
তরুণরা এক নতুন আগামীর স্বপ্ন দেখায় আমাদের। এই আগামী যেন সুন্দর হয়, সবাই যেন সমান অধিকার পায় সেই আশাই আমরা করি। সেই স্বপ্নকে বাস্তব রুপ দিতে হলে আমাদের এখন থেকেই কাজ শুরু করতে হবে এবং তরুণরা যেন সঠিক পথে পরিচালিত হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। আশা করি গর্ভপাত বিষয়ক ভুল ধারনাগুলো ভেঙে তরুণরা এগিয়ে যাবে এবং এক সুন্দর আগামী আমরা দেখতে পাবো।